Monday, August 15, 2011

প্রশ্ন প্রশ্ন প্রশ্ন


আমরা আজ এক যুগ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছিআমাদের ব্যক্তি জীবন অচল হয়ে গেছে - রাষ্ট্রিয় জীবন অচল - বিশ্ব ব্যবস্থাও এক অচলায়তনে পর্যভূষিতআমরা রাজনৈতিকভাবে সমাধান করতে চেষ্টা করেছিআমরা অর্থনীতি দিয়ে চেষ্টা করেছিআমরা সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে চেষ্টা করেছিকিন্তু কিছুতেই যেন সমাধান হয়না - আমরা আটকে গেছি এক কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থায়প্রচন্ড চাপে অথবা চাপ সৃষ্টি ক'রে বাঁচতে হচ্ছে মানুষকে

হাজার বছর ধ'রে মানুষ ধর্ম দিয়ে চেষ্টা ক'রেছেএতে গিয়ে আরো জটিল সমস্যার সৃষ্টি হয়েছেসবার দাবি তার ধর্মই সঠিক পথ দেখিয়েছেযদি অক্ষরে অক্ষরে মানা হয় তবে নিশ্চিত তার পথ ধ'রে পৌঁছে যাওয়া যাবে অভিষ্ট লক্ষ্যেকিন্তু সমস্যা একটাই কোনটা সঠিক ধর্মপ্রত্যেকে বলছেন তাঁরটাই সঠিক আর অন্যটা ভুল পথআর এর বাইরে যারা আছে তারা বিপথগামীঅন্যেরটা ভুল না হ'লেও তারটাই সর্বত্তোম রাস্তামানুষে মানুষে হানাহানি - তোমরা আর আমরা আর তারা - বিচ্ছিন্ন সবাই পরস্পর থেকেকিন্তু সবার একই উদ্দেশ্য - সুখ শান্তি সমৃদ্ধিকিন্তু সবাই মিলে কোনো ভাবেই সেখানে পৌঁছাতে পারছিনাসোনার হরিণ কেবল স্বপ্নই, বাস্তবে পাওয়া গেল নাবরং আরো অসম্ভব হ'য়ে উঠছে দিনে দিনেআর এদিকে ক্রমে ফুরিয়ে যাচ্ছে জ্বালানি, শেষ হ'য়ে যাচ্ছে আবাদের যথেষ্ট জমিবিশুদ্ধ খাবার পানি, শুদ্ধবায়ু

বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির অভূতপূর্ব উন্নতি কিন্তু মানুষ  অভুক্ত চিকিসাহীন হ'য়ে মরছেজাতীয়তার নামে ধর্মের নামে নিঃসংকোচে মানুষ মানুষকে মারছেনানান প্রাকৃতিক বিপর্যয় উজার ক'রে দিচ্ছে আমাদের কত জনপদ

আমরা কত আদিম এখনোআমাদের পাশেই মানুষ মরছেমারছে মানুষ মানুষকেআমরা নির্বিকার নিরুপদ্রব জীবন যাপন ক'রে যাচ্ছিকাজ করছি, খাচ্ছিদাচ্ছি, বিয়ে ক'রছিছেলেমেয়ের মা বাবা হচ্ছিপ্রমোশন পাচ্ছি, বুড়ো হচ্ছি, রিটায়ার করছিএবং এক সময় ম'রে যাচ্ছিকি অর্থ এসবেরকি করতে চাচ্ছি? কেন চাচ্ছিবেঁচে থাকাটাই এক যুদ্ধকেন বাঁচবো?

সবারমত - কিংবা অনেকের মতো অনেক প্রশ্ন আমাকে বার বার বিদ্ধ ক'রেযখন নিজের জীবনটা অচল হ'য়ে পড়ে তখন জানতে চাই কেন আমার জীবন এমন ক'রে ব্যর্থ হ'য়ে যাচ্ছেকেন যা চাচ্ছি তা পাচ্ছি না? কেন সুখ শান্তি নিত্য আমাকে কলা দেখিয়ে অতৃপ্তিতে ভ'রে দেয় জীবনঅনেক সংগ্রামের পরও কেন অর্থ আমার জীবনকে অর্থহীন ক'রে দেয়কেন আর্থিক স্বাচ্ছন্দ আমাকে বারবার ধরা দিতে দিতেও দেয়নাএকদিনতো  বিশাল এক মানুষকেই ক'রে ফেললাম এক বিরাট দার্শনিক প্রশ্ন? কিভাবে সততার সাথে জীবন যাপন ক'রেও আর্থিক সমৃদ্ধি লাভ করতে পারবো?

অনেক খোঁজখুঁজি করলামসংগ্রামে গেলাম, আন্দোলন করলামরাজনীতি করলাম, পার্টি করলাম, আত্ম উন্নয়ন প্রচেষ্টা কিংবা ধর্ম সাধনাসবই যেন শেষ পর্যন্ত অর্থহীনবই পড়তে খুব ভালো লাগে আমারকিন্তু খুব ভালো পড়ুয়া না আমিভাষা জ্ঞান বাঙালের বাংলা আর গ্রামার পড়া ইংরেজিআর কোনো ভাষা জানা নেইতদুপরি এসে পড়েছি মধ্যপ্রাচ্যেবই পাওয়া যায় এখানে খুব সীমিতবাংলা নয় ইংরেজিকিন্তু আমার চাকুরির স্থলে এক অপূর্ব সুযোগ রয়েছে - ইন্টারনেটসময় খুব কম পেতাম কিন্তু খেপার মত কেবল বারবার খুঁজেছি কোনো রাস্তা আছে কি? না নেই

একদিন হঠা'রে এক বই এসে হাজির আমার সার্সেওসিআর স্ক্যান ক'রে পিডিএফ ফাইল বানিয়েছেন কোন এক সহৃদয় পাঠক (হ্যাকারও বলা যায় এক অর্থে)কিন্তু এই লেখক ব্যাটা বলে কি? একই প্রশ্ন তারও। ---

"কেন আমার জীবন অচল হয়ে পড়ল? কিভাবে আমার জীবন সচল হবে? আমি কেন দাম্পত্য সম্পর্কে সুখী হতে পারছি না? আর্থিক স্বাচ্ছন্দের সুখ কি আমি কখনোই লাভ করতে পারবো না? সর্বোপরি আমি জানতে চাই, সত্যি আমি কি এমন করেছি যে আমাকে এমন একটা অবিরাম সংগ্রামের জীবন যাপন করতে হবে?" আর হঠা এসবের উত্তর পেতে শুরু করলো সেআমাদেরকে অবাক ক'রে দিয়ে এই বই আমাদের সামনে তুলে ধরে আমাদেরই কত পরিচিত সব উত্তরআমাদের আহবান করে নিজের ভেতরে উত্তর খুঁজতেএই বইটার লেখক নিল ডোনাল্ড ওয়্যাল্‌শ্ (Neale Donald Walsch)বইয়ের নাম কনভার্সেশনস্ উইথ্‌ গড - ঈশ্বরের সঙ্গে কথোপকথন

বিশ্বের আজ অনেক মানুষ নিলের মতই বিশ্বাস করেন যে, আমরা আজকে যে সমস্যার সম্মুখিন তা আমাদের ভেতরের সমস্যাএর সমাধান আমাদের ভেতরের সত্যের পরিবর্তনের মাধ্যমেই হবেবাইরে থেকে নয়বরং ভেতর থেকে বাইরেঈশ্বরকে বাদ দিয়ে নয়কিন্তু ঈশ্বর সম্পর্কে আমাদের ধারণার পরিবর্তনের মাধ্যমেজীবন সম্পর্কে আমাদের ধারনার পরিবর্তনের মাধ্যমেআমাদের নিজেদের সম্পর্কে ধারণার পরিবর্তনের মাধ্যমাভুল শুদ্ধ ন্যায় অন্যায় নয় বরং কি আমাদের জন্য কার্যকর বা কি আমাদের বারবার আটকে দিচ্ছে? আমি এই চমকার বইটা পড়তে আমন্ত্রন জানাবো - আরেকটা রাস্তার পথিকদেরকে

জাতীয় শোক দিবসে যুক্ত হয়েছে তারেক মাসুদ আর মিশুক মনির সহ আর ৩জনের মর্মান্তক মৃত্যুজাতির পিতা বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমানের প্রতি আমার গভীর শ্রদ্ধা জানাইশ্রদ্ধা জানাই মুক্তির দিগন্তের তারেক মাসুদকে, সাহসী সংবাদিক মিশুক মুনিরকেআর যুগ যুগ ধরে স্বাধীনতাকামী মানুষদেরকেবিশ্বের সব প্রাণকেই আমি শ্রদ্ধা জানাই

তাপস দে
মাস্কাট/ ওমান
১৬ অগাষ্ট ২০১১

Saturday, February 19, 2011

Cultural Story

বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ দারিদ্র আর অনাহারে মরলেও আমরা মানব সমাজের অন্য সদস্যরা কেমন নির্বিকার আমাদের জীবন যাপন করে যাচ্ছি। মোট জন সংখ্যার ৫% মানুষ বিশ্বের ৯০% সম্পদের নিয়ন্ত্রক। এটা নির্ভুল ডাটা নয়, তবে সংখ্যাটা প্রায় এই রকমই। সমস্যা এটা নয় যে আমাদের যথেষ্ট নেই - সমস্যা হলো আমাদের শেয়ার করার - সবার সাথে ভাগ করে নেবার ইচ্ছাটা যথেষ্ট নেই। আমরা - মানব সমাজের সদস্যরা হাজার বছর ধরে সভ্যতার এমন এক গল্প (cultural story) বানিয়েছি আর সেটা নির্ভুল সত্য জেনে জীবন যাপন করে যাচ্ছি যা আর আমাদের জন্য লাগসই নয়। আমাদের তৈরী সত্য আজ আমাদের ধ্বংস করতে উদ্যত। আমরা আমাদের নিজেদের হত্যা করতে - নিজেদের আবাস এই পৃথিবীকে বসবাসের অযোগ্য করে ফেলতেও দ্বিধাহীন।
আমাদের বর্তমান সাংস্কৃতিক গল্প অনুযায়ী - আমার যা তা আমার, তোমার যা তা তোমার। এক কথায় তুমি আর আমি আলাদা - আমরা বিছিন্ন পরস্পর থেকে। কিন্তু আমরা আসলে এক - একটি মাত্র সত্তা, যা আমরা এখনো জানিনা। যা আমরা এখনও উপলব্ধি করতে পারিনি। কিন্তু আমাদের অনেক পরিবারে এই আমি আর তুমি ভেদাভেদটা আজ আর নেই। ভালোবাসায় পূর্ণ প্রায় সব পরিবার তুমি আমি - তোমার আর আমার ভেদটা ঘুঁচে যায়। যেটা আমার সেটা তোমারও। আমরা আমাদের পরিবারের অন্যদের না দিয়ে খাবার কথা ভাবতেই পারি না। ভাজা ডিমের একটুকরা কিংবা মাছ ভাজার কিছুটা আমার টেবিলের অন্যদের না দিয়ে খাওয়া প্রায় অসম্ভব আমাদের কাছে। কিন্তু আমরা মানব পরিবারের অন্যদের সাথে এটা প্রতি নিয়ত করছি। আমরা খাচ্ছি আর ফেলছি। সংগ্রহ করছি - আরো সংগ্রহ করছি - ব্যবহার করছি বা করছিনা। আমার চোখের সামনে মানুষ না খেয়ে থাকছে - খাবার অযোগ্য খাদ্য খেয়ে বাঁচতে চাচ্ছে। কিন্তু আমরা নির্বিকার। কারণ আমাদের সাংস্কৃতিক গল্প - আমাদের সংস্কার। আমরা অন্যদের কে আমাদের পরিবারের সদস্য হিসেবে দেখি না। এটা আমাদের গল্পের সমস্যা সম্পদের অপ্রাচুর্য কোনো সমস্যা নয়।